শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রমজানের জন্য যেসব প্রস্তুতি জরুরি

মুফতি আইয়ুব নাদীম:
দুনিয়ার প্রতিটি কাজের নির্দিষ্ট মৌসুম আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ ও কাজকর্মের যেমন মৌসুম আছে, তদ্রুপ মৌসুম আছে দ্বীনি কাজের ক্ষেত্রেও। জিন ও মানবজাতিকে আল্লাহতায়ালা ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাদের ইবাদতেরও মৌসুম আছে। আর ইবাদতের মৌসুম হলো রমজান মাস।

রহমত, বরকত, ক্ষমা ও মাগফিরাতের বার্তা নিয়ে রমজান আমাদের মাঝে আসন্ন। আর কিছুদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে রমজান মাস। প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তার সংশ্লিষ্ট মৌসুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দদায়ক। কারণ মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে সে অর্জন করতে পারে তার কাক্সিক্ষত বিষয়াবলি। তাই আমাদের এখন থেকে ইবাদতের মৌসুম রমজান মাসকে সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। যেন যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে রমজান কাটানো যায়। আর অর্জন করা যায় রমজানের অজস্র রহমত, বরকত ও সওয়াব। রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে কয়েকটি বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত।

তওবা করা : রমজান মাস সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য যেসব প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি, সেসবের অন্যতম একটি তওবা করা। তওবা মানে অতীত জীবনে কৃত সব গুনাহ থেকে খাঁটি দিলে আল্লাহতায়ালার কাছে ফিরে আসা। আর তওবা আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় একটি আমল। যার দ্বারা আল্লাহতায়ালা বান্দার সব গুনাহ মাফ করে থাকেন। তওবা আল্লাহতায়ালার কাছে কতটা প্রিয় আমরা তা চিন্তাও করতে পারব না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবার কারণে সেই লোকটির চেয়েও বেশি খুশি হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তার একমাত্র বাহন উট হারিয়ে পুনরায় ফিরে পেলে যে পরিমাণ খুশি হয়, তার চেয়েও বেশি খুশি হন আল্লাহতায়ালা।’ সহিহ বোখারি

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সবাই মিলে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করো, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে।’ সুরা নুর, আয়াত ৩১

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তবে যে ব্যক্তি তওবা করেছে, ইমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, আশা করা যায় সে সফলতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ সুরা কাসাস, আয়াত ৬৭

সুন্দর পরিকল্পনা করা : পরিকল্পনা উন্নতির সিঁড়ি। দ্বীন দুনিয়ার উভয় ক্ষেত্রে সফলতার জন্য সঠিক পরিকল্পনা জরুরি। দুনিয়ার বিষয়ে যেমন, দ্বীনের বিষয়েও তেমন। তাই দ্বীনি বিষয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে, টার্গেট থাকতে হবে। আমি কী হতে চাই, আমি কতটুকু পরহেজগার হতে চাই, কোন মানের দ্বীনদার হতে চাই, কতটুকু ইবাদতগুজার হতে চাই, কোন পর্যায়ের অলি বা বুজুর্গ হতে চাই, পরিকল্পনা না থাকলে এ ক্ষেত্রেও ততটা উন্নতি করা যায় না। ইবাদতের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও টার্গেট ঠিক করে মেহনত শুরু করলে সফল হওয়াটা নিশ্চিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই মোবারক মাসে প্রতিদিন একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, হে পুণ্যকামী! তুমি এগিয়ে চলো। হে পাপাকাক্সক্ষী! তুমি বিরত থাকো।’ মুসতাদরাকে হাকেম

সব ঝামেলা সেরে ফেলা : রমজানের একটা মুহূর্ত যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য রমজান আসার আগেই নিজের ও পরিবারের জরুরি কাজ ও যাবতীয় ঝামেলা সেরে ফেলা।

প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে ফেলা : রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরো রমজান ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোর সুবিধার্থে নিজের ও পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয়তা জিনিসপত্র কেনাকাটা করে রাখা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এমন বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।’ সুরা তাতফিফ, আয়াত ২৬

অসহায়দের জন্য কেনাকাটা করা : সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় ও গরিব মানুষদের জন্য রমজানের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র, ইফতারি ও সাহরির সামগ্রী খরিদ করে দেওয়া। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতারি করায়, তাকে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দেওয়া হয়। অথচ রোজাদারের সওয়াব থেকে সামান্য কমানো হয় না।’ তিরমিজি

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি কোনো কষ্ট দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের ময়দানে তার কষ্টগুলো দূর করবেন।’ সহিহ মুসলিম

তারাবি আদায়ের স্থান ঠিক করা : বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ মসজিদে খুব তাড়াহুড়ো করে তারাবির নামাজে তিলাওয়াত করা হয়। তাই যেসব মসজিদে কোরআনের আদব রক্ষা করে তারতিলের সঙ্গে এবং খুব ধীরস্থিরে তিলাওয়াত করা হয়, খুঁজে খুঁজে সে রকম মসজিদ বের করে সেখানে তারাবির নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরো।’ আবু দাউদ

অনর্থক কাজ ত্যাগ করা : রমজান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। তাই অহেতুক কাজ, অনর্থক কথাবার্তা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল-ইন্টারনেটে সময় দেওয়া ইত্যাদি ত্যাগ করা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কাজ ত্যাগ করা।’ তিরমিজি

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION